julymassacrearchive.org

শহীদ ডা: সজীব সরকার

ডাক্তার,

তায়রুননেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ, টঙ্গী

মৃত্যু তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে মাদ্রাসা পড়ুয়া ভাইকে আনতে গিয়ে ১৮ জুলাই ঢাকার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নরসিংদীর রায়পুরার বাসিন্দা চিকিৎসক সজিব সরকার। ওইদিন রাতেই উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্বজনরা লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরদিন তার লাশ নিজ এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঘটনার সপ্তাহ পেরোলেও থামেনি স্বজনদের শোক-আহাজারি। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন সজিবের মৃত্যুতে এখন অথৈ সাগরে ভাসছে পুরো পরিবার। নিহত সজিব রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মেঝেরকান্দি গ্রামের মো. হালিম সরকারের ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের লেকচারার ছিলেন। বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতেন। তিনি তিন ভাই এক বোনের মাঝে সবার বড় ছিলেন। নরসিংদীর ভাড়া বাসায় রোববার গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে মা ঝর্ণা বেগম এখন পাগলপ্রায়, অসুস্থ হয়ে অক্সিজেন নিচ্ছেন। ছেলের স্মৃতিচারণ করে বিলাপ করে মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলছেন, সজিব সবসময় আমাকে ছোট্ট সন্তানের মতো আগলে রাখত। আমিসহ সবার খরচ জোগাত। ১৮ জুলাই ১১টায় বাসা থেকে ছোট ছেলেকে আনতে বের হয়। বেলা সাড়ে ৪ থেকে ৫টার মধ্যে আজমপুর পৌঁছে ফোনে কথা হয়। রাত ১টা পর্যন্ত ছেলের অপেক্ষায় বসেছিলাম। আমাদের যা ছিল সব ছেলেকে চিকিৎসক বানাতে ব্যয় হয়েছে। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। আমার ছেলে হত্যার বিচার কিভাবে পাব সেটাই চাইব। সবাই যাতে জানে সজিব ডাক্তার নির্দোষ। সজিব যেন আজীবন সবার মাঝে বেঁচে থাকে এমন কিছু একটা নামকরণ করা হোক।

সজিবের বোন সুমাইয়া সরকার স্বর্ণা বলেন, ১৮ জুলাই দুপুরে ঢাকার উত্তরার রাজলক্ষ্মীর একটি কওমি মাদ্রাসা পড়ুয়া ছোট ভাই আব্দুল্লাহকে আনতে নরসিংদীর বাসা থেকে বের হন সজিব। তুমুল আন্দোলনের সময় আজিমপুরে গিয়ে বাস থামে। বিকাল ৫-৬ মধ্যে আজমপুর বাস থেকে নেমে রাজলক্ষ্মী মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশে রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে থাকেন। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন। সন্ধ্যা ৭টায় ভাইয়ের বন্ধুর মাধ্যমে ভাই নিখোঁজের খবর পাই। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ খুঁজে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি। জানতে পারি আজমপুরের রাস্তায় পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

সজিবের ভাই আব্দুল্লাহ বলেন, এর আগের সপ্তাহে ভাই মাদ্রাসায় এলে সর্বশেষ দেখা হয়। আর বলে যান ১৮ তারিখ মাদ্রাসা ছুটি হলে আমাকে নিতে আসবেন। দীর্ঘ বছর মাদ্রাসা থেকে বাড়ি আসার যাওয়ায় একা বের হতাম না। ভাই আনা নেওয়া করতেন। ওইদিন বিকালে তিনবার ভাইকে ফোন করে না পেয়ে ব্যাগ নিয়ে ভাইয়ের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় বসে থাকি। রাত ৯টায় পরিচিতজন মাদ্রাসায় এসে বলল, তোমার ভাই হাসপাতালে অসুস্থ। এসে ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই। ভাইয়ের লাশ রাতেই উত্তরার একটি মসজিদে গোসল করাতে গিয়ে কাপড় সরাতেই দেখি ভাইয়ের বুকের সামনে অংশে গুলির বড় গর্ত হয়ে পিছন দিক দিয়ে বের হয়েছে। দুই পাশ দিয়ে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। সজিবের বাবা মো. হালিম সরকার বলেন, ছেলেকে খুব কষ্ট করে ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত পড়াশোনা করাই। ২০২০ সালে টঙ্গীর বেসরকারি তাইরুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করে। যা সহায় সম্বল ছিল সব ছেলেকে ডাক্তার বানাতে ব্যয় করেছি। আমি আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ছেলে খুব ধার্মিক ছিল। ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না, রাষ্ট্র যদি তদন্ত করে ছেলে হত্যার বিচারটা করে, তা হলেই তার আত্মা ও আমরা শান্তি পাব।’

হত্যাচেষ্টা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভিকটিমকে জড়িয়ে সাজানো অপহরণের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুমন মিয়া। তার বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুর গ্রামে। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে সুমন বলেন, কুমিল্লা সদর দক্ষিণের লালমাই বাজারে সাব্বির হোসেন নামের যুবককে অপহরণ অভিযোগটি উদ্দেশ্যমূলক। এটি মূলত আমার মায়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল ও হত্যাচেষ্টা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার-যা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

প্রকৃতপক্ষে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের দানোড়া পশ্চিমপাড়া আমার নানার বাড়ি। সেখানে আমার মা মমিনা বেগমের পৈতৃক সম্পত্তি তার জেঠাতো ভাইয়ের ছেলে হেলাল, জহির ও জহিরের ছেলে সাব্বির, হেলালের ফুফাতো ভাই মোখলেসের নেতৃত্বে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে অবৈধভাবে দখল করে নেয়। আমার মামা হাজি আব্দুল মজিদ ও আমেরিকা প্রবাসী মামাতো ভাই মাবুল হক আমার মায়ের পৈতৃক সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের মূল ইন্ধনদাতা। মায়ের পৈতৃক সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ নিয়ে বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের দানোড়া পশ্চিমপাড়া যাওয়ার পথে আমার মামাতো ভাই হেলাল, জহির ও জহিরের ছেলে সাব্বির, হেলালের ফুফাতো ভাই মোখলেসের নেতৃত্বে পলাশ, মিরন, নোমান, ফারুক, রহমান, জসিম, শাফায়েত, আনিস, ফয়জুল্লাহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাকে কুপিয়ে মাথায় মারাত্মক জখম করে এবং আমার পালসার হোন্ডা, মোবাইল ও টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমার স্ত্রী কুমিল্লার আদালতে মামলা করেন। আমার মা উপরোল্লিখিত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে আরও একটি মামলা করেন। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘরে হামলা চালালে আমার মা মমিনা ও আমার বোন মরিয়ম কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবর পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। আমাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিরা ২ মার্চ আদালতে হাজিরা দেয়। মামলার বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামি সাব্বিরকে দিয়ে একটি অপহরণ নাটক সাজায় অন্য আসামিরা।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার এসআই দিলীপ জানান, অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top