julymassacrearchive.org

তাহির জামান প্রিয়

সাংবাদিক

১৯ জুলাই ,২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শহিদ তাহির জামানের মায়ের অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী তাহির জামান পিও হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। শিক্ষার্থী তাহির জামান পিও’র মা সামসিয়ারা জামান মঙ্গলবার এই অভিযোগ দাখিল করেন। এদিকে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশে সংঘটিত গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও গুমসহ সব অপরাধের বিচার হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা এবং শারমিন সুমির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। সামসিয়ারা জামান সাংবাদিকদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ১৯ জুলাই বিকাল ৫টা থেকে ৫টা ১০ মিনিটের মধ্যে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শহিদ হন তাহির জামান পিও। এপিবিএন-এর ড্রেস পরা একদল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পেছন থেকে পিওকে গুলি করে হত্যা করে। আমার সন্তানকে নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে গুলি করার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

শহিদ বীর সন্তানের মা বলেন, তাহির জামান পিও অনলাইন পত্রিকা দ্য রিপোর্টে সাংবাদিক হিসাবে কাজ করত। পাশাপাশি পিও সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে সিনেমাটোগ্রাফি ও ফটোগ্রাফির ওপর পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পিওর মা জানান, তিনি রংপুরে থাকেন। এই ঘটনায় তিনি রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় এর আগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে তিনি জানতে পারেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘জুলাই ৩৬’-এর ঘটনায় ভিকটিমদের পক্ষে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। শুনে তিনি মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে এসেছেন। শহিদ মাতা সামসিয়ারা জামান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার সন্তানসহ সব শহিদ ও আহতদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যাসহ সব অপরাধের বিচার ট্রাইব্যুনালে : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের এখতিয়ার শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এবং এ সংক্রান্ত মামলার অভিযোগগুলো তদন্তের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার।’ তিনি বলেন, ‘স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলো থেকে জুডিশিয়াল নথি এবং থানাগুলোতে সংরক্ষিত নথিগুলো ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে প্রেরণ করতে আমরা আদালতের আদেশ চাইব। এসব নথি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে কোনো মামলায় যদি ভুল লোককে আসামি করা হয়, তাকে আমরা বাদ দেব এবং প্রকৃত অর্থে যারা দোষী তাদের পক্ষভুক্ত করে যথাযথ মামলা দায়ের করা হবে।’ যারা এখনো মামলা করেননি তারা অবশ্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ধানমন্ডি ১১/এ অফিস অথবা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এসে সরাসরি কিংবা ডাকযোগে অভিযোগ করতে পারবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘মামলাসংক্রান্ত সব তথ্যপ্রমাণ, অডিও-ভিডিও, পত্রিকা, মেডিকেল রিপোর্ট, নথি সবকিছুসহ মামলা দায়ের করতে হবে, পরবর্তী সব দায়িত্ব প্রসিকিউশনের এবং এসব মামলা পরিচালনার জন্য কোনো ধরনের কোনো আইনজীবী নিয়োগ, টাকা ব্যয় কিংবা হাজিরা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।’

শহিদ এবং ভিকটিম পরিবারের সবাইকে দ্রুততম সময়ে আসল অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সব প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ জমা সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনাল বরাবর অভিযোগ জানাতে আহ্বান জানান তিনি। মামলার সাক্ষী কিংবা ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ চাঁদাবাজি, হুমকি কিংবা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকলে তাকে আইনানুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হবে। উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থার দেওয়া তথ্যের আলোকে ট্রাইব্যুনালে করা মামলার আসামি যারা অনেকেই অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে আছেন তাদের নাম আমরা জানতে পেরেছি। খুব শিগগিরই তাদের আদালতে উপস্থাপন করে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হবে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, প্রকৃত দোষী যত শক্তিশালীই হোক, তাদের বিরুদ্ধে যদি অকাট্য প্রমাণ থাকে তবে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যারা নিরপরাধ তাদের হয়রানি বন্ধেও ট্রাইব্যুনাল সতর্ক থাকবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ১৯ জুলাই আন্দোলনে শহিদ তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসি আরা জামান এবং শহিদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ এবং গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম। উপস্থিত সবাই সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানান।

তথ্যসূত্র :যুগান্তর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top