julymassacrearchive.org

শহীদ জাকির হোসেন সাকিব


তরুণ উদ্যোক্তা,

আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা

মৃত্যু তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

‘১২ দিন হতে চলছে আমার মানিক দুনিয়াতে নেই। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না এই অস্বাভাবিক মৃত্যু।’ এভাবেই বিলাপ করতে থাকেন কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত জাকির হোসেনের (৩৬) মা মোমেনা বেগম। 

১৯ জুলাই (শুক্রবার) দুপুরে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন জাকির। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। জাকিরের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের চরদুর্লভখা গ্রামে। পেশাই তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা।

জানা যায়, গত ১৯ জুলাই নিজের কারখানার জন্য কোনাবাড়িতে কিছু মালপত্র কিনতে যান জাকির হোসেন। পরে দুপুরে একজন ক্রেতার সঙ্গে দেখা করতে রাজধানীর উত্তরার দিকে রওনা হন। পথে আব্দুল্লাহপুরে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ ঘটছে, এমন খবর জানিয়ে জাকিরকে সতর্ক করতে ফোন করেন মা মোমেনা বেগম। তখনই ঐ এলাকায় পুলিশ ও ছাত্র-জনতার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছোড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পর পর দুটি গুলি এসে পিঠে ও পেটে লাগলে মাটিতে পড়ে যান জাকির হোসেন। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ১৪ ঘণ্টা পর মারা যান তিনি। 

সন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা এখন দিশেহারা। জাকিরের মা মোমেনা বেগম বলেন, ১৯ জুলাই সকাল থেকেই মনটা খুব খারাপ লাগছিল। চারদিকে নানা ধরনের গুজব আর গণ্ডগোলের খবর শুনছিলাম। গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ ও আতঙ্কের খবর বলছিল কেউ কেউ। এ জন্য জাকিরকে ফোন করেছিলাম। তাকে সাবধানে থাকার জন্য বলছিলাম, কিন্তু সে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই গুলিবিদ্ধ হয়। মুহূর্তের মধ্যে ফোনে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। একজন মা হিসেবে সে মুহূর্তের কথা মনে হলে আমি আর ঠিক থাকতে পারি না।

জাকিরের স্ত্রী জান্নাতুন নাঈম বলেন, জাকির ১৯ জুলাই সকালের খাবার খেয়ে বাসা থেকে বের হয় অফিসের কথা বলে। সারা দিন অফিসে থাকবে বলে জানিয়েছিল। সারাদিন আর তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। বিকাল ৫টার দিকে তার অফিসের কয়েকজন বাসায় আসেন। তাদের কাছেই প্রথম জানতে পারি জাকির গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে উত্তরার হাসপাতালে ছুটে গেলেও স্বামীকে আর বাঁচাতে পারিনি। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top