julymassacrearchive.org

শহীদ ওয়াকিল আহমেদ শিহাব

শিক্ষার্থী,

এসএসসি, জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয়

মৃত্যু তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

আন্দোলনে গিয়ে শহীদ হওয়া ছেলের কথা মনে হতেই চোখ জলে ভিজে ওঠে মা মাহফুজা আক্তারের। গত ৪ আগস্ট চুল কাটার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন শিহাব। পরে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিতে বন্ধু মাসুদের সঙ্গে ফেনীর মহিপালে যান তিনি। আন্দোলনে গিয়ে শহীদ হন শিহাব।

পুরো নাম ওয়াকিল আহমেদ শিহাব (২০)। ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ শিখছিলেন ফেনীর মহিপাল প্লাজায়। তার স্বপ্ন ছিল কাজ শিখে বিদেশে গিয়ে পরিবারের হাল ধরবেন। বাবাকে প্রবাসজীবন থেকে মুক্তি দিতে তারই যাওয়ার কথা ছিল প্রবাসে। সেই যাওয়া আর হলো না। পরিবারে নেমে আসে গভীর অন্ধকার। তার পড়ার টেবিল, ছবি, ব্যবহৃত পোশাক ও অন্যান্য জিনিস বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা। তাকে হারিয়ে আজ তারা দিশেহারা।

দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে গিয়ে শহীদ হওয়া এই অসহায় পরিবারের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহযোগিতার হাত বাড়াবে এবং খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবে—এমন প্রত্যাশা স্বজন ও এলাকাবাসীর।

গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি। বুকে তিনটি গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় শিহাবের শরীর। সেদিন মহিপাল সার্কিট হাউস রোডে পড়ে ছিল তার নিথর দেহ। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

ফেনী সদর উপজেলার দক্ষিণ কাশিমপুর ঐতিহ্যবাহী আফতাব ভূঞা বাড়িতে গত ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি জম্ম হয় শিহাবের। ২০২৩ সালে স্থানীয় জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তার বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম সৌদি আরব প্রবাসী। মা মাহফুজা আক্তার একজন গৃহিণী। ছোট ভাই ওয়ালিদ আহমেদ সিয়াম মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।

ঘটনার দিন ৪ আগস্ট সকালে বন্ধুর ফোনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেন। দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে স্বৈরাচারী হাসিনার পেটোয়া বাহিনী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে চারদিক ঘেরাও করে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর গুলি করতে থাকে। তিনটি গুলি এসে বিঁধে শিহাবের বুকে। পরে কয়েকজন মিলে তাৎক্ষণিক শিহাবকে উদ্ধার করে একটি সিএনজি রিকশায় করে চিকিৎসার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থাকে তিনটি লাশ। সেখানে মুখের কাপড় তুলে দেখে ছোট ভাই সায়েম তার ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে। সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা মনে এলে এখনো গা শিউরে উঠে স্বজন ও এলাকাবাসীর।

শিহাবের কাকা সুমন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে গত ৪ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপালে স্বৈরাচারী হাসিনার পেটোয়া বাহিনী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন ফেনীর জায়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস ওয়াকিল আহমেদ শিহাব। তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে বিষাদ, স্বপ্ন ভেঙে হয় চুরমার।

এ ঘটনায় শিহাবের মা মাহফুজা আক্তার ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরই মধ্যে পিএস মানিক নামে মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top