julymassacrearchive.org

সাওয়ান্ত মেহতাব প্রিয়

শিক্ষার্থী

লেখাঃ রাশেদ খান

জুলাইয়ের উত্তপ্ত দুপুরে পীচগলা রোদ্দুরে মুখটা লাল হয়ে যেতো ছেলেটার, মিছিলের সবার সামনে থাকতো; পরোপকারী, নির্ভিক, উৎসাহী আর প্রাণ প্রাচুর্য্যে ভরপুর এক তরুণ, নাম তার সাওয়ান্ত মেহতাব প্রিয়। প্রিয় শুধু নামেই না, আক্ষরিক অর্থেই পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র জুনিয়র সবার মাঝেই প্রিয় ছিলো এই ছেলেটা। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিটি কর্মসূচিতে বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে আন্দোলনে আসতো যশোর জিলা স্কুল পেরিয়ে কলেজে ওঠা মেহতাব প্রিয়। যশোরের আন্দোলনে HSC’24 এর ব্যাচটা কত বড় ভূমিকা রেখেছিলো সেটা যশোরবাসী জানে; প্রিয় ছিলো তাদেরই একজন। মিছিলের মাঝে তীব্র গরমে শার্ট খুলে গলায় ঝুলিয়ে রাখতো। ৫ই আগষ্ট, ২০২৪ স্বৈরাচার হাসিনার পতনের আনন্দে বিজয় মিছিল করতে করতে আমরা চাঁচড়া থেকে দড়াটানা অভিমুখে যাচ্ছি; প্রেসক্লাবের সামনে থেকে কিছুতেই মিছিলটাকে দড়াটানা অভিমুখে নিতে পারছিলাম না আমরা। মাইকপট্টি পৌঁছে দেখি পাপের প্রাসাদ জাবীর ইন্টারন্যাশনাল আগুনে জ্বলছে, প্রতিটা তলায় আটকা পড়েছে নিরীহ মানুষগুলো। সবার বাঁচার আকুতি, ধোঁয়া আর আগুনে দমবন্ধ পরিবেশ! ৫-৬ তলা থেকে কেউ কেউ লাফ দিচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, হাত পা ভাঙলেও বেঁচে থাকতে পারবে, শুধু এই আশায়! সেই করুণ দৃশ্য বর্ণনা করার সাধ্য আমার নেই। চোখের সামনে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার মত সহ্য ক্ষমতা ছিলো না প্রিয়র৷ আগুনের লেলিহান শিখায় দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা জাবীর ইন্টারন্যাশনালে আটকে পড়া মানুষগুলোকে উদ্ধার করতে ওই জ্বলন্ত নরকে ছুঁটে গিয়েছিল মেহতাব প্রিয়! কিন্তু, এই সাহসী তরুণ ফিরলো পোড়া লাশ হয়ে। প্রিয়র মত এমন আরো অনেকেই সেদিন উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে প্রাণ হারায়৷ প্রিয়কে আমরা ভুলিনি, আমরা ভুলিনি তার সংগ্রাম, দ্রোহ, মানবিকবোধ আর আত্মত্যাগ! কলুষিত এই রাজনীতির খেলায় হাজারো বলির মধ্যে অন্যতম আমাদের প্রিয়৷ এই প্রিয়দের আত্মত্যাগ নতুন স্বপ্ন দেখতে বাধ্য করায়, কিন্তু সময়ের আবর্তে আমরা ভুলতে বসি! আঠারো বছরের প্রিয় যেন সুকান্তের কবিতার সেই দ্রোহ, “জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top