julymassacrearchive.org

শহীদ সানি আহমদ

রাজমিস্ত্রির জোগালি,

সিলেট

মৃত্যুর তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

প্রতিবেদন: বাসস

নির্জন টিলায় শুয়ে আছেন সানি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন সানি আহমদ। টিলাটি এত নির্জন, দিনের বেলায়ই ভয় হয়। সানিদের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। আমুড়া ইউনিয়নের শিলঘাট কুমারপাড়া গ্রামে।

উপজেলা সদর থেকে যেতে হয় পাহাড়-টিলা পেরিয়ে। ভাইবোনের মধ্যে সানি দ্বিতীয়। ওর বড় বোন রিমার বিয়ে হয়ে গেছে। সানির থেকে বয়সে ছোট বোন ইমরানা বেগম রুফি, রুলি আক্তার রুহি, জুলি আক্তার জুঁই এবং সব ছোট ভাই সামি। সানির খুব শখ ছিল পড়ালেখা করবে। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সে। বাবার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এরপর তার হৃদরোগ। কাজ করতে তো কষ্ট হয়, মাঝে-মধ্যে কথা বলতেও কষ্ট হয়। এজন্যে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে সানি কাজে নামে।

সংসারের অভাব ঘুচানোর জন্যে বছর কয়েক ধরে সানি রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজ করছিল।

প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস হলেও সেখানে সানিদের নিজস্ব বসত ভিটেও নেই। তারা একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। সানির স্বপ্ন ছিল কাজ করে করে তিনি এক টুকরো বসতভিটে কিনবেন। সে ভিটায় থাকার ঘর বানাবেন। কিন্তু সানি পৌঁছাতে পারেননি তার স্বপ্নের কাছাকাছি। তার আগেই নিষ্ঠুর বুলেট কেড়ে নিল তার প্রাণ।

সানির স্বপ্নের কথা বলছিলেন সানির বাবা কায়সার আহমদ। তিনি বললেন, ছেলের লাশ দেখার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার নির্দোষ ছেলেটাকে ওরা গুলি করে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

সানির ছোট চাচা রাজু আহমদ জানান, সানি তার সন্তানের চেয়েও প্রিয়। সেই শৈশব থেকেই সানি তার আমার সাথে ঘুমাত। ঘটনার দিন ৪ আগস্টও সানি আমার সাথে একই খাটে ঘুমিয়েছিলে। ভোরে তিনি ক্ষেতের কাজে চলে যান। পরে সানিও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু সেই সানি আর জীবিত ফিরে আসেননি, এসেছে তার লাশ।

তিনি আরও জানান, সেদিন আমি ক্ষেতে কাজ করছিলাম। দুপুরের দিকে গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে কীসব ঘোষণা আসছিল, তেমন খেয়াল করেনি। বাড়ি ফেরার সময় প্রতিবেশীরা তার মৃত্যুর কথা জানায়।

রাজু আহমদ বলেন, আন্দোলনের সময় সানি মিছিলে অংশ নিয়েছিল। সেই মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে সানি শহীদ হয়। মিছিলটি হয়েছিল গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন রাস্তায়।

তিনি আরও বলেন, তিনি ঘটনাস্থল দেখতে গিয়েছিলেন। এলাকার মানুষ বলেছেন, সানি এলাকার মানুষের সাথে মিছিলে ছিলে। সানি গুলিবিদ্ধ হবার পর রাস্তার পাশের একটি বাড়ির কচু গাছের ঝোপে পড়ে যায়। পরে তাকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল। ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার চাচা আক্ষেপ করে বলেন, ভূমিহীন পিতার জন্য সানি ছোট্ট একটি ভিটাতে ঘর বানাতে চেয়েছিলে। কিন্তু তার সেই স্বপ্নপূরণ হলো না। সানি আর ফিরে আসবেন না।

তথ্যসূত্র: কালবেলা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top