শিক্ষার্থী,
নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, উত্তরা, ঢাকা
মৃত্যু তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

লেখা: লুৎফুজ্জামান লিটন
বুকভরা আশা নিয়ে ১৪ জুলাই উত্তরার আজমপুরে নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন টঙ্গীর রাহাত হোসেন শরীফ (১৬)। রাহাতের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে জার্মানি যাবেন। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন হাউজবিল্ডিং এলাকায় একটি গুলি রাহাতের সবকিছু থমকে দেয়। ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার সব স্বপ্ন। ছেলেকে হারিয়ে রাহাতের স্মৃতিই এখন মা স্বপ্না আক্তারের একমাত্র অবলম্বন।
নিহত রাহাত ছিলেন নরসিংদীর রায়পুরা থানার বাহেরচর গ্রামের মোহাম্মদ সেলিম মিয়ার একমাত্র সন্তান। তিনি টঙ্গী শহিদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। রাহাতের মা জানান, দীর্ঘ ২০ বছরের দাম্পত্য জীবনে রাহাতই ছিল তাদের একমাত্র সন্তান। ১৮ জুলাই দুপুরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সে বাসা থেকে বের হয়। বিকালে উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার মাঝে পড়ে তারা। এ সময় রাহাত মাথায় গুলি বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধার করে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী নিয়ে দাদার কবরের পাশে দাফন করেন। আদরের সন্তানকে হারিয়ে রাহাতের মা পাগলপ্রায়। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কান্না করতে করতে বারবার মূর্ছা যান। সৌদি প্রবাসী বাবা সেলিম মিয়া পুত্রশোকে পানাহার ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
তিনি আরও জানান, সংসারে অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও ছেলেকে তা কখনো বুঝতে দিইনি। রাহাত জার্মানি যাবে সে আশায় বুক বেঁধে লেখাপড়া করে যাচ্ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরা শতকষ্ট করেও টাকা-পয়সা জোগাড় করছিলাম। আজ তা ধূলিসাৎ হয়ে গেল। পুলিশের একটি গুলিতে, একটি ভবিষ্যৎ, একটি স্বপ্ন নিমিষেই চুরমার হয়ে গেল। ছেলেকে অবলম্বন করেই বেঁচে ছিলাম, এখন কাকে নিয়ে আমরা বাঁচব। ছেলে আমার ২০ বছরের সাধনার ধন। আমার ছেলে কারও সঙ্গে কখনো ঝগড়া-ফ্যাসাদে জড়াত না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? কার কাছে আমি ছেলে হত্যার বিচাই চাইব।