julymassacrearchive.org

শহীদ মো: টিটু হাওলাদার

অ্যাম্বুলেন্স চালক

পিতা: আব্দুর রহিম হাওলাদার

মৃত্যু তারিখঃ ১৮ জুলাই, ২০২৪

কথা ছিলো এবার বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসবেন। কিন্তু সেটা আর হলো না। কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঢাকায় নিহত হন অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. টিটু হাওলাদার। স্ত্রী সন্তানদের আহাজারিতে শোকাতর টিটুর বাড়ি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় গুলিতে নিহত হন অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. টিটু হাওলাদার। স্ত্রী আয়েশা আক্তার স্বামীর শোকে এভাবেই আর্তনাদ করতে করতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।

বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের নীলখোলা গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক আব্দুর রহিম হাওলাদার ও গৃহিণী রাশেদা বেগমের সন্তান মো. টিটু হাওলাদার। চার ভাই বোনের মধ্যে টিটু সবার বড়। মা রাশেদা বেগম ৪ বছর আগে সাপের কামড়ে মারা যান। অভাবের কারণে ছোট ভাই ইমরান হোসেনও রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এক বোনকে বিয়ে দিতে পারলেও আরেক বোন বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এখনও ভাইয়ের সংসারে থাকছে। বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী ও তিন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে টিটু কয়েক বছর আগে পাড়ি জমান যাদুর শহর ঢাকায়। তাই টিটুর আকস্মিক মৃত্যুতে এখনো শোকে কাতর পুরো পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. টিটু হাওলাদার ঢাকায় একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন। গত ১৮ জুলাই দুপুরের খাবার খেয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তার মাথায় একটি বুলেট বিদ্ধ হয়েছিল। সারা শরীরে ছিল অসংখ্য রাবার বুলেটের ক্ষত। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হসপিটালে ছুটে যান তার স্বজনরা। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০ জুলাই রাতে বাড়িতে লাশ নিয়ে যান। পরে জানাজা শেষে দাফন হয় টিটুকে।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে টিটু হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে,  স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই শোকে পাথর হয়ে গেছে স্ত্রী আয়েশা আক্তার। মুখে দানাপানিও নিচ্ছেন না ঠিকমতো। হঠাৎ চিৎকার করে বিলাপ করতে থাকেন তিনি। মায়ের মতোই শোকে মুষড়ে গেছে ১০ বছরের মেয়ে তানজিলা আক্তার। তিন সন্তানদের মধ্যেই তানজিলা বড় হওয়ায় সবকিছুই বুঝতে পারছেন তিনি। ৪ মাসের ছোট মেয়ে তামান্না জানেই না তার প্রিয় বাবা চলে গেছে অজানা এক দেশে, সে আর কখনও ফিরবে না। ৬ বছরের ছেলে সায়মুন এখনও বুঝে উঠতে পারছে না তার বাবা কোথায়। তার ছোট্ট দুটি চোখ খুঁজে ফিরছে বাবাকে।

টিটুর মামাতো ভাই রাকিব হাসান বলেন, টিটু নিহতের খবর পেয়ে আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ছুটে যাই। তারপর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০ জুলাই রাতে বাড়িতে লাশ নিয়ে আসি। পরে জানাজা শেষে টিটুর দাফন করা হয়।

১০ বছরের মেয়ে তানজিলা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবায় কি দোষ করছে হেরে কেন মাইরা ফালাইলো। তোমরা আমার বাবারে আইন্না দেও। আমি আমার বাবার সাথে ঢাকা যামু বলেই অঝোরে কাঁদলেন তানজিলা।

টিটুর বাবা আব্দুর রহিম বলেন, আমার ছেলে কোন রাজনীতি করতো না। কারো আগেও ছিলো না, কারো পিছেও ছিলো না। ঢাকায় অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে বাড়িতে আমাদের জন্য টাকা পাঠাত। এবারে আমার ছেলে ঢাকায় যাওয়ার সময় বলেছিলো, বাবা ওদের (টিটুর সন্তানদের) দেইখা রাইখো। এই ছিলো আমার ভাগ্যে? আমার বাবাকে পক্কির (পাখির) মতো গুলি কইরা মারছে। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার নাতি নাতনীদের এখন কে দেখবো? বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আব্দুর রহিম।

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারাই নিহত হয়েছে প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা উচিত। সেই সাথে ছাত্রদেরও একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে যেভাবে সহিংসতায় রূপ দেওয়া হলো এই ঘটনারও তদন্ত করে দোষীদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। সেই সাথে এই আন্দোলন সহিংসতায় যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে পুনর্বাসিত করার দাবি জানাচ্ছি।

তথ্যসূত্র: News 24

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top