julymassacrearchive.org

শহীদ কামরুল ইসলাম (সেতু)

ব্যবসায়ী,

মিরপুর

মৃত্যু তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

যত রাতই হোক, বাবা না আসা পর্যন্ত খেতেন না মো. কামরুল ইসলাম ওরফে সেতুর (৪৭) মেয়ে উমাইয়া ইসলাম (১৯)। সেই বাবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিতে মারা যান। বাবার এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে উমাইয়া।

কামরুলদের বাড়ি ফরিদপুর শহরতলির রঘুনন্দনপুর হাউজিং এস্টেটে। তবে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বরে থাকতেন।
৪ আগস্ট রাতেই কামরুলের লাশ ফরিদপুরে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। পরদিন বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরের আলীপুর পৌর কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। বর্তমানে কামরুলের পরিবারের সবাই ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতেই আছেন।

কামরুল ইসলাম ঢাকায় কসমেটিকসের ব্যবসা করতেন। তাঁর অফিস ছিল মিরপুর-১০ নম্বরে। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কামরুলের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ৪ আগস্ট দুপুরে নামাজ পড়তে যান তাঁর স্বামী। নামাজ শেষে তিনি স্ত্রীকে কল করে বলেন যে তাঁর এখানে খুব গন্ডগোল হচ্ছে। অফিসে দুজন কর্মচারী আছে। তাদের বিদায় দিয়ে অফিস বন্ধ করে তিনি বাসায় ফিরবেন। চিন্তা না করতে বলেন।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কামরুলের ছেলে আলভী বিন ইসলাম (২৩) বলেন, অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও তাঁর বাবা বাসায় ফেরেননি। তখন তিনি বারবার বাবার নম্বরে কল দিতে থাকেন। অনেকক্ষণ পর একজন কলটি ধরে বলেন, ফোনটি যাঁর, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁকে মিরপুরের আল–হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে তিনি ও তাঁর স্বজনেরা জানতে পারেন, ওই হাসপাতাল থেকে কামরুলকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে খুঁজে পান তিনি। হাসপাতালের মৃত্যুর সনদে বলা হয়, ‘মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’

কামরুলের ছেলে আলভী বিন ইসলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছেন। মেয়ে উমাইয়া এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। কামরুল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবারের সদস্যরা।

কামরুলের মেয়ে উমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘বাবা যত রাত করে বাসায় ফিরুক না কেন, আমি না খেয়ে বসে থাকতাম বাবার জন্য। বাবা এলে আমরা একসঙ্গে খেতাম। বাবা নেই জানি। তারপরও বাবার অপেক্ষায় থাকি। যদি কখনো বাবা এসে খাওয়ার জন্য ডাকেন!’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top