julymassacrearchive.org

শহীদ আসাদুল্লাহ

গাড়িচালক, উত্তরা

মৃত্যু তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরার বাওনিয়াতে থাকতেন আসাদুল্লাহ (৩৫)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনাতার আন্দোলন চলাকালীন গত ১৯ জুলাই বিকেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উত্তারার দলিপাড়ায় মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। এরপর আসরের নামাজের জন্য বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
আসাদুল্লাহ শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ছনকান্দা গ্রামের আ. মালেকের ছেলে। তিনি প্রাইভেটকারের ড্রাইভার ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনিই পরিবারের হাল ধরেন। আসাদুল্লাহর বাবা মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শেরপুর থেকে মাছ নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করতেন। এক পর্যায়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকতে শুরু করেন। ১৭ বছর আগে আসাদুল্লাহর বাবা মারা যান। এরপর থেকে আসাদুল্লাহই পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেন।

গত ১৯ জুলাই ঢাকা উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের দুই নম্বর রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আসাদুল্লাহ। এরপর ২২ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে ভর্তি থাকার পর তিনি মারা যান। ২৪ জুলাই বেওয়ারিস হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম, ঢাকা তার মরদেহ দাফন করে। ১১ আগস্ট শাহবাগ থানা থেকে শহীদ আসাদুল্লাহর পরিবার এই তথ্য জানতে পারে।

নিহত আসাদুল্লাহর মা আয়েশা খতুন বলেন, ‘আমার ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার বাওনিয়াতে থাকে। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) আমার ছোট ছেলেকে ফোন দিয়ে তার বাসায় নিয়ে যায়। এক সঙ্গে দুই ভাই জুমার নামাজ পরে দুপুরের খাবার খেয়ে সবাইকে নিয়ে দলিপাড়ায় আমাকে দেখতে আসে। আমার চোখের চিকিৎসা করাবে, চশমা ও কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে। এরপর আসরের নামাজ পড়তে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আজও ফেরেনি। ঘটনার দিন রাত থেকে আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করি, ছোট ছেলে ঢাকা মেডিকেলসহ সব হাসপাতালে খোঁজে, কিন্তু আমার ছেলের কোনো সন্ধান পাইনি। এর ২০ দিন পর গত ১১ আগস্ট শাহবাগ থানা থেকে ফোন আসে। পরে আমার ছোট ছেলে সেখানে গিয়ে ছবি দেখে বড় ছেলেকে চিনতে পারে। তবে খুঁজে পাওয়ার আগেই আমার ছেলের লাশ বেওয়ারিস হিসেবে দাফন হয়ে গেছে। আমি ছেলের লাশটাও দেখতে পাইনি।

নিহত আসাদুল্লাহর স্ত্রী ফারজানা বলেন, আমার স্বামী আন্দোলনের সময় নিখোঁজ হন। তার আর কোনো সন্ধান পাইনি। এখন আমার দুই ছেলে-মেয়েকে কে দেখবে, কে ওদের পড়াশোনার খরচ চালাবে। এই দের মাসই চলতে খুব কষ্ট হয়ে গেছে, সামনের দিনগুলো কেমনে কাটবে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। গত ১৯ জুলাই আসরের নামাজ পড়তে আমার শাশুড়ির বাসা থেকে বের হন। যাওয়ার সময় আমাকে বলে যান, ‘মাগরিবের নামাজের পর তোমাদেরকে বাসায় নিয়ে যাবো’। এরপর তার ফিরতে দেরি হওয়ায় আমি আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসি। রাত সারে ১০টার পরও বাসায় না ফেরায় সবাই খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। কোন খোঁজ পাইনি। পরে গত ১১ আগস্ট শাহবাগ থানা থেকে জানতে পারি, আমার স্বামী ১৯ জুলাই ঢাকা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে দুই নম্বর রোডে গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর ২২ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। এরপর তিনি মারা যান। ২৪ জুলাই বেওয়ারিস হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ঢাকা আমার স্বামী মরদেহ দাফন করে। এ বিষয়টি শাহবাগ থানা আমাদের জানায়। আমার স্বামী আমাদের পরিবার ও আমার শাশুড়িকে দেখাশোনা করত। আমার বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে, মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করা কথা। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি, তবে জামায়াতে ইসলামী থেকে ২ লাখ টাকা সহযোগিতা করেছে আমাদেরকে।

নিহত আসাদুল্লাহর ছোট ভাই রমজান আলী বলেন, আমার মায়ের বয়স প্রায় ৬০ বছর। ভাইয়ের টেনশনে গত কয়েকদিনে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। লাশ দাফনের বিষয়ে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে দাফন সেবা অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা ২৪ জুলাই বেওয়ারিস হিসেবে রায়েরবাজার এবং মোহাম্মদপুর কবরস্থানে একাধিক মরদেহ দাফন করেছি। তার কাছে আসাদুল্লাহর কবর কোনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে একাধিক কবর রয়েছে, এর মধ্যে কোনটা কার কবর, সেটা বলার উপায় নেই।
শ্রীবরদী উপজেলার নির্বাহী অফিসার শেখ জাবের আহামেদ বলেন, আমরা তার বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি। তবে তার পরিবার যদি ডেড সার্টিফিকেটসহ আমাদের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেন, আমরা তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top