বীমা কর্মকর্তা,
সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স, বাংলামোটর শাখা
মৃত্যু তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

লেখা: বাসস
আবদুল গণি বোরহান, বয়স ৩২ বছর। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি গ্রামের প্রয়াত মাস্টার আহসান উল্যাহ ও নুর নাহারের ছেলে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। কুমিল্লা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করে রাজধানীতে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে চাকরি নেন।
একই উপজেলার চরছান্দিয়া ভূঞা বাজার-সংলগ্ন এলাকায় সেলিম ভূঞা-বিবি হাজেরা দম্পতির মেয়ে আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করেন ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। শুরু হয় সুখের স্বপ্ন বুনন। আয়েশা সোনাগাজী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ফাজিল (ডিগ্রি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কথা ছিল ২০২৫ সালে আয়েশাকে রাজধানীতে নিজের কাছে নিয়ে রাখবেন।
কিন্তু সেই কথা রাখতে পারেননি বোরহান। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সাথে অংশ নেন। গণ-অভ্যুত্থানের ঠিক আগের দিন ৪ আগস্ট বিকালে পুলিশ ও পতিত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন বোরহান।
আয়েশা জানান, রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় মিছিলে ছিলেন বোরহান। তখন একের পর এক গুলিতে তিনি রাজপথে লুটিয়ে পড়েন। ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মোবাইল ফোন থেকে কল পেয়ে বড় ভাই মহসিন ছুটে যান হাসপাতালে। আয়েশা তখন বাবার বাড়ি ছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, বছর না পেরুতেই আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। বোরহানের মা-বাবাও নেই। এখন আমার ঠিকানা ঘুরেফিরে বাবার বাড়ি। বোরহানের নিথর দেহ ৫ আগস্ট রাতে নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়িতে। এখানে রাত ৯টার দিকে দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
আয়েশা আরও বলেন, যখন আশপাশে চলছিল বিজয় উল্লাস তখন বোরহানের বাড়িতে ছিল শোকের মাতম। তিনি আরও বলেন, আমাদের দুই চোখে এখন কেবলই অন্ধকার। অজানা ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকায় দিন কাটাচ্ছেন।
এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকেও পেয়েছেন অনুদানের টাকা।
আয়েশার মতে, শুধু অনুদান নয়, বোরহানসহ সব শহীদের স্মৃতিকে অমলিন রাখতে সরকারের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
বড় ভাই আমানত উল্যাহ বলেন, এক সপ্তাহ আগে ভাই বোরহান বাড়ি থেকে রাজধানী ফিরে যান। সপ্তাহ ঘুরতেই ফিরে আসেন কফিনবন্দি হয়ে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে শহীদ হয়ে তিনি শুধু পরিবার নয়, দেশবাসীকেও সম্মানিত করেছেন। তাই শহীদদের প্রতি এ ঋণ শোধে দেশবাসীরও দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট রাতে সোনাগাজী ছাবের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার সময় স্থানীয় জনতা দাবি জানিয়েছিল, ওই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনকে বোরহানের নামে নামকরণের জন্য। এ ছাড়া সোনাগাজী পৌর শহরের জিরোপয়েন্টকে ‘বোরহান চত্বর’ নামকরণেরও দাবি তোলা হয়। তিনি জানান, বোরহানের হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে দেরি হওয়ায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে। তবে শিগগির তিনি অথবা তার ভাই মহসিন বাদী হয়ে মামলা করবেন। তিনি বোরহানসহ সব শহীদের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এ ছাড়া তিনি শহীদ বোরহানের স্ত্রী আয়েশা আক্তারের কর্মসংস্থানে সরকারি উদ্যোগেরও দাবি জানান।