julymassacrearchive.org

শহিদ হাফেজ ইমরান

হাফেজ ও শিক্ষার্থী,

জিরুন্ডা মানপুর তোফাইলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা 

মৃত্যুর স্থান: সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

মৃত্যুর তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

প্রতিবেদন : মো. শফিকুল ইসলাম 

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দক্ষিণ সাহেব পাড়ায় কাপড়ের ব্যবসা করেন সোয়াব মিয়া। সেখানেই পরিবারসহ থাকেন।

কিন্তু ১৭ বছরের ছেলে হাফেজ ইমরান থাকতেন হবিগঞ্জে। সেখানে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতেন। আর সেখান থেকে এসে থাকতেন দাদির সঙ্গে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার রামপুর গ্রামে।

২০ জুলাই হাফেজ ইমরান সিদ্ধিরগঞ্জ গিয়েছিল মা-বাবার কাছে। তখন চলছিল বৈষম্যবিরোধী তীব্র ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা নির্মম হয়ে ওঠে। তাদের গুলিতে দেশজুড়ে প্রচুর সংখ্যক লোক হতাহত হয়। 

ওইদিন বিকেলে মাত্র ৩ মিনিটের জন্য বাইরে বের হয়েছিলেন হাফেজ ইমরান। তিনি দোকানে যাচ্ছিলেন সেভেন আপ কিনতে। কিন্তু বের হওয়ার পর মুহূর্তেই একটি গুলি তার বুকে বিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা অতিদ্রুত তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

একদিন পর ২২ জুলাই সন্ধ্যায় তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।

ইমরান প্রথমে কোরআনে হাফেজ হন। এরপর তিনি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার জিরুন্ডা মানপুর তোফাইলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছিলেন। ওখান থেকে নাসিরনগরে দাদির কাছে এসে থাকতেন।

হাফেজ ইমরানের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় একটি দোচালা টিনের ঘর। চার ভাই-বোনের মধ্যে হাফেজ ইমরান ছিলেন সবার ছোট। 

ইমরান শহিদ হওয়ার পর পুরো পরিবার এখন গ্রামে চলে এসেছে। ইমরানের বাড়ি গিয়ে পাওয়া গেলো তার বড় ভাই তোফায়েল আহমেদকে। 

বাসসের এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভাইকে হারিয়েছি। আমার ভাই শহিদ হয়েছে। দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়েছে। কিন্তু আমার ভাই তো আর ফিরে আসবে না।’

এসময় তিনি তার ভাই হাফেজ ইমরান হত্যার বিচার দাবি করেন।

এদিকে বাড়ির উঠানে বসে চোখের পানি মুছতে মুছতে দাদি নিহারা বেগম বলেন, ‘কিতা আর কমু, আমার বুকের ধন কাইড়া নিছে। নারায়ণগঞ্জ যাওনের আগের দিন আমার গলায় ধইরা কইছিন, দাদি, আমি আবার কিছুদিন পর বাড়িত আইয়া পড়ুম। তুমি চিন্তা কইরো না। আমার নাতি বাড়িত আইছে ঠিকই, কিন্তু লাশ হইয়া।’

ইমরানের বাবা সোয়াব মিয়া বলেন, ‘ইমরান সেদিন কইছিল, তিন মিনিট সময় দিবানি, একটু দোকানে যামু। একটা সেভেন আপ খাইয়া আবার আইসা পড়ুম। কিন্তু এই যাওয়া যে শেষ যাওয়া হইব, কেডা জানত।’ 

এ সময় তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন। 

ছেলে হারানোর শোকে মূহ্যমান মা ইয়াসমিন আক্তার (৪৫)। এখনও তিনি ছেলে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। ছেলের প্রসঙ্গ উঠতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন। 

কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়েছি। আমি জানি ছেলে হারানোর ব্যথা। এ ব্যথা কি করে ভুলব? আমার বাজানটা মাত্র কয়েক মিনিটের জন্যে বাইরে গেল। ফিরে আসলো লাশ হয়ে।’

এ সময় তিনি তার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন যেন সে জান্নাতবাসী হয়।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জেলার ২০ জন নিহতের একটি খসড়া তালিকা আমরা পেয়েছিলাম। পরে যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে তালিকার ৩ নম্বরে আছে নাসিরনগরের হাফেজ ইমরান। তার নামটি শহিদদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়টি সুপারিশসহ গৃহীত হয়েছে।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top