রিকশাচালক
শিবগঞ্জ, বগুড়া
মৃত্যুর স্থান: সাভার
মৃতুর তারিখ: ২০ জুলাই
প্রতিবেদক: আনোয়ার পারভেজ
সেদিন সকালে কিছু না খেয়েই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছিলেন রনি প্রামাণিক (২৮)। স্বামীর খোঁজ নিতে দুপুরে ফোন দেন স্ত্রী শামিমা খানম। রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো না হওয়ায় তিনি স্বামীকে অনুরোধ করেছিলেন তাড়াতাড়ি ঘরে আসতে। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে জবাবে রনি বলেছিলেন, ‘কিস্তির টেকা এখনো জোগাড় হয়নি। টেনশন করিও না। রিকশাত খ্যাপ মারিচ্চি। কিস্তির টেকাটা জোগাড় হলেই চলে আসমো।’
২০ জুলাই শেষ পর্যন্ত রনি আর ফেরেননি। পরে স্বজনেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন রনি প্রামাণিক। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে তাঁর লাশ।
রনির বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের পঞ্চদাশ গ্রামে। স্ত্রী ও ছোট দুই সন্তান নিয়ে তিনি ভাড়া থাকতেন সাভারের ডেল্টার মোড় এলাকায়। ব্যাটরিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জোগাড় হতো সংসারের খরচ। স্বামীর সঙ্গে ফোনে শেষ কথা হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শামিমা খানম গতকাল শনিবার আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘রনি, তুমিই হামাক ফোনত কইল্যা, ‘‘টেনশন করিও না’’, অথচ দুনিয়ার বুকত হামাক একা ফাইল্যা তুমি চলে গেলা। হামাক কেন তুমি সারা জীবনের জন্যি এতডা টেনশনে ফেলে দিয়্যা গেলা।’
রনির বাবা দিলবর রহমান প্রামাণিক অনেক আগেই মারা গেছেন। দুই ভাই–বোনের মধ্যে বড় রনি প্রামাণিক। তাঁর পাঁচ ও দেড় বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে। বড় ছেলের নাম ইয়াসির আর ছোট ছেলের নাম ইভান। গুলিবিদ্ধ হয়ে রনি মারা যাওয়ার পর স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম।
পঞ্চদাশ গ্রামে গিয়ে কথা হয় রনি প্রামাণিকের মা শাহানা বেগমের (৬৫) সঙ্গে। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তিনি। শাহানা বেগম জানান, রনির বয়স যখন সাত বছর, তখন তাঁকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সাভারে গিয়েছিলেন। রনিও অল্প বয়স থেকেই পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেছিলেন। বাবা-ছেলের সঙ্গে তিনিও পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তিনজনের উপার্জনে মেয়ে শিল্পী খাতুনকে বিয়ে দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। থাকার জায়গাও নেই। খাসজমিতে ঘর তুলে কোনোরকমে থাকেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রনি সাভারে থাকতেন। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। মাসে মাসে তাঁকেও কিছু টাকা পাঠাতেন। ছেলের উপার্জনে চারজন মানুষের পেটে ভাত জুটত।
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো