julymassacrearchive.org

মিনারুল ইসলাম

পোশাক শ্রমিক

রাসিক কাউন্সিলরের জালিয়াতি

জুলাইয়ের শহিদ মিনারুলের ‘মৃত্যুসনদে’ সড়ক দুর্ঘটনা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জে গুলিতে প্রাণ হারান পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম (২৭)। পরদিন রাজশাহী নগরীর গুড়িপাড়া-পুরাপাড়া মহল্লার বাড়িতে লাশ নেওয়া হয়। ছুটে আসেন সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী। তিনি পরিবারকে বলেন, মিনারুল গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা বলা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলে লাশ দাফন করতে হবে।।তৎকালীন প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতার মুখের ওপর তখন কোনো কথা বলতে পারেননি মিনারুলের ভাই নাজমুল হক। সড়ক দুর্ঘটনা বলেই মৃত্যুসনদ দেন রজব আলী। রাজশাহীতে এভাবেই জুলাই বিপ্লবের শহিদের মৃত্যুসনদে লেখা হয় সড়ক দুর্ঘটনা। তবে শেষ পর্যন্ত একজন শহিদ হিসাবেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তাকে। সম্প্রতি তার পরিবার জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছে। মিনারুল যখন নিহত হন, তখন স্ত্রী শম্পা খাতুন ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। স্বামী হারানোর পর পুত্রসন্তানের মা হয়েছেন তিনি। স্বামীর সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছেন মিনহাজুল ইসলাম। শিশুটির বয়স এখন ৩ মাস। জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন মিনারুলের স্ত্রী শম্পাকে চার লাখ ও মা ডলি বেগমকে এক লাখ টাকা দিয়েছে। মিনারুল হকের ভাই মো. সোহেল জানান, ৫ আগস্টের আগে আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা কম দেখাতে কাউন্সিলর রজব আলী ও তার ভাই রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান তাদের বলতেই দেননি যে মিনারুল পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। নানামুখী চাপে রেখেছিলেন তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পালিয়ে যান নাহান। আর ৭ আগস্ট চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালাতে গিয়ে বিজিবির হাতে গ্রেফতার হন রজব আলী।

মিনারুলের আরেক ভাই নাজমুল হক ৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ-সদস্য শামিম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, আব্দুল্লাহ আল কায়সার, নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রজব আলী, তার ভাই নাহান ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী রোডের আল আমিন নগরে আন্দোলনকারীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় মিনারুলের পেটের নিচে গুলি লাগে। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে শহরের খানপুরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী নগরীর গুড়িপাড়া পুরাপাড়া মহল্লায় বাড়িতে কথা হয় মিনারুলের মা ডলি বেগম এবং তার রিকশাচালক দুই ভাই নাজমুল হক ও মো. সোহেলের সঙ্গে। সোহেল একটি ভিডিও দেখান। এতে দেখা যায়, ট্রলির ওপর মিনারুলের নিথর দেহ পড়ে আছে। তার তলপেটের স্থান থেকে ব্যান্ডেজ খোলা হচ্ছে। সেখানে প্রায় আধা ইঞ্চি একটি গভীর ক্ষত। এটি বুলেটেরই ক্ষত বলে দাবি পরিবারের। এলাকাবাসীও বলছেন একই কথা। মিনারুলের লাশ গোসল করিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা হলে তো শরীরের অন্য স্থানেও আঘাতের চিহ্ন দেখা যাবে। কিন্তু কোথাও কোনো আঘাত আমি দেখিনি। গোসলের সময় লাশ আমি উলটপালট করে দেখেছি। শুধু তলপেটেই একটি গভীর ক্ষত ছিল। সেটা বুলেট ঢুকে যাওয়ার ক্ষত বলেই আমি মনে করি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জিকেএম মেশকাত চৌধুরী মিশু যুগান্তরকে বলেন, আমরা অবশ্যই মিনারুল ইসলামের পরিবারের পাশে দাঁড়াব। কারণ, যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, তাদের এজেন্ট এখনো রয়ে গেছে। তারা আমাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। যারা এসব অপপ্রচার করছে, তারা নিশ্চয় কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। রাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সচিব সামশুল কবির যুগান্তরকে জানান, তিনি দুই মাস হলো এখানে এসেছেন। তিনি আসার আগে কীভাবে মৃত্যুসনদে সড়ক দুর্ঘটনা লেখা হয়েছে, তা তিনি বলতে পারবেন না। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। সময় লাগলে লাগুক, তদন্ত সঠিক হবে। যেটা সত্য, সেটাই বেরিয়ে আসবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top