শিক্ষার্থী
লেখকঃ যারিন তাসনিম ( শহীদ আবরার মাসনুনের চাচাতো বোন)
আমার চাচাতো ভাই আবরার মাসনুন নীল। আমার আপন ভাই বোন নাই। তবে কাজিন ২৪ জন আমার কলিজার ২৪ টা টুকরা। এর মধ্যে একজন আজকে শহীদ হয়েছে। বয়স কতই বা ছিলো? ১২ মাত্র! আমার ফাদার সাইডে সবথেকে ছোট ও। ওর জেদ-রাগ যেমন ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষমতাও তেমন প্রবল। আমরা ভাই বোনেরা একে খুব যত্নে রাখতাম সবার ছোট বলে। আদরের বাচ্চা আমাদের কিভাবে মারা গেলো জানেন?
বিজয় মিছিলে গেছিলো। ডানপিটে স্বভাবের হওয়াতে কোন ফাঁকে চলে গেছে কেউ জানতো না। মিছিলে গিয়ে দেখেছে আগুন লেগেছে Zabeer হোটেলে। ওখানে ও পানি দিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করতেছিলো। মানুষকে বের করা চেষ্টা করতেছিলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নাই। জানোয়ারের দল জাবিরের নিচের ফ্লোরে আগুন দিয়ে উপরের ফ্লোরে লুট করেছে। এই ডাকাতদের আবার হেলিকপ্টার দিয়ে রেস্কিউ করা হয়েছে, এর বাইরে একজনকেও না। এদিকে আগুন যখন ছড়িয়েছে, তখন নিচের ফ্লোরে তালা মেরে দিয়েছে সোনার ছেলেরা। সারাটা দুপুর-বিকাল- রাত ওরে পাইনি কোত্থাও! ভোরবেলা ওর পোড়াদেহ পাওয়া গেছে মর্গে। একজনের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছে নীলু আমার!
শুধু আমার নীল না, ওর মতো আরো অনেকের প্রাণ গেছে এই হিংসাত্মক অগ্নিকাণ্ডে। আমার সান্ত্বনা শুধু এইটুকুই যে আমার ভাই শহীদ। দেশের পরিস্থিতি এতটাই বাজে, আমার অন্য ছোট ভাই-বোনগুলার মাথায় হাত বুলায়ে সান্ত্বনাও দিতে পারিনাই। নীলকে আমি যতই বকাঝকা, মাইর দেইনা কেনো, ভাই আমার একটু পরে ঠিকই কাছে আসতো। বেশিক্ষণ মনোমালিন্য থাকতো না। এখন কই গেলো সব??
ভোরবেলা মাথায় হাত দিয়ে দিয়ে ঘুম থেকে তুলা, রাতে আমার কাছে ঘুমানোর জন্য কান্নাকাটি করা, কোনো occasion এ কবে আসবো জানার জন্য পাগল করে দেওয়া, আবার কখনো আমার কাছে বকা খেয়ে কানতে কানতে আবার আমার কাছেই আসা- এগুলো আর কার সাথে হবে? আমার মান অভিমান ভাঙানোর মানুষটা গেলো কই? কই গেলে পাবো ওরে?? আমার বাচ্চাটারে একটু জড়ায়ে ধরতাম শুধু শেষবার!!
নীলকে যারা কেড়ে নিয়েছে আমাদের থেকে, প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে। উপযুক্ত শাস্তি আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নিশ্চিত করবো যাতে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে এতটা কষ্ট নিয়ে কাউকে মরতে না হয়!